নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব
শহরের রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী, নালাগুলো অপরিষ্কার, অলিতে–গলিতে ছড়িয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। দখল-দূষণে খালে পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ। নির্মানের তিন বছর পরে উদ্ধোধন হলেও অতিরিক্ত প্রবেশ মূল্য নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পৌর পার্কটি। শহরজুড়ে রাস্তায় ভাঙ্গা ও জলাবদ্ধতা। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। প্রায় সাড়ে তিন বছরের উপরে চলমান সময়ে ভৈরব পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে আছেন আলহাজ্ব ইফতেখার হোসেন বেনু। তিনি ভৈরব পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন’র আস্থাবাজন। মেয়রের দাবি, এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে এখনো কোন বিশেষ বরাদ্দ না পেলেও রাজস্ব খাতে উন্নয়নমুলক কাজের টেন্ডার হয়েছে। তবে বরাদ্দ না পাওয়ায় মেয়রের ‘অযোগ্যতা’ও দায়ী বলে অভিযোগ অনেকের।পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং পৌর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌর এলাকায় গত কয়েক বছরে নতুন সড়ক হয়নি বললেই চলে। সংস্কার না হওয়ায় অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। কিছু এলাকার বাসিন্দারা বিভিন্ন দাবিতে তাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে প্রায়ই ভিড় জমায়।
দেখা যায়, পৌরসভার কালিপুর, রামশংকর পুর, চন্ডিবের,আমলা পাড়া,কমলপুর,পঞ্চবটি, জগন্নাথপুরসহ এলাকার বেশির ভাগ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১২টি ওয়ার্ডের প্রায় সব কটির রাস্তাঘাটই ভাঙাচোরা ও এবড়োখেবড়ো। বিশেষ করে শহর রক্ষা বাধ সড়কের অবস্থা আরও নাজেহাল। এটি বাজারের প্রবেশ মুখের আরেকটি রাস্তা । পৌর এলাকার ১,২ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সড়কে বৃষ্টি এলেই বেশীরভাগই সড়ক বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যায়। এছাড়া রাস্তার অনেক জায়গায়ই ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আর রয়েছে পানিনিষ্কাশনের নালা আবর্জনায় ভরা।
ময়লা আবর্জনার জন্য নির্দিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে রেলওয়ে স্টেশন সড়কের দুই পাশ, শহর রক্ষা বাধ এলাকার মেঘনা নদীর সাথে লাগানো খালটি। এখানে প্রতিদিন ময়লার গাড়ি এসে ময়লা ফেলে রেখে যাচ্ছে আর এদিকে ভরাট হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই খালটি। এছাড়া এভাবে আরেকটি মেঘনা নদীর সাথে মিলিত বিলের খালটিও শেষ হয়ে গেছে,সেটি হচ্ছে বর্তমান মেয়রের এলাকা পলতাকান্দা চন্ডিবের মধ্যবর্তী বিলটি। বর্তমানে বালু ভরাট করে অনেকেই বসতি অবস্থায় রয়েছে। আবার দেখা যাচ্ছে বালু ভরাটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে কালিপুর পলতাকান্দা গ্রামের মধ্যবর্তী বিলটি। এখানে বিলের মুখটি বালু ভরাট করে কয়লার ব্যবসা শুরু হয়েছে। এতে করে বর্ষাকালে পানি ডুকলেও পরে আর বের হতে পারে না। এতে করে বোরো ধানের আবাদ করতে পারেনা অনেক কৃষক। এছাড়া শহরের গাছতলা ঘাট এলাকার বিল সাতমুখী বিল ও পলতাকান্দা এলাকার খালগুলো দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। খাল বিলের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টিতেই ঐসব জায়গায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। দুর্ভোগে পড়ছে এলাকার মানুষ।
কালিপুর গ্রামের মাইনুউদ্দিন, আমির হামজা ও আবুল হোসেন বলেন, বিলের মুখ বালু দিয়ে বন্ধের কারণে বর্ষাকালে পানি আসার পরে শুকনো মৌসমে আর বের হতে পারে না। যার কারণে আমাদের যে জমি রয়েছে সেখানে বোরো ধান চাষ করা যায় না। সারা বছরই পানি লেগে থাকে আবার সেই পানি চলাচল না করার কারণে পচা গন্ধ ছড়ায় ও মশার জম্ম হয়। এতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়।
পৌর শহরের কমলপুর এলাকার বাসিন্দা মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসায়ী মানুষ, ব্যবসার করার জন্য প্রতিদিন ভৈরব বাজারে আসা যাওয়া করতে হয় বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে কিন্তু এত সুন্দর রাস্তাটি ছোট ছোট গর্তের কারণে প্রতিদিন যাতায়াতে কষ্ট হয়। আর একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ড্রেনের পচা গন্ধ ময়লা পানি বের হয়। পৌর এলাকার রাম শংকরপুরের বাসিন্দা মহেশ, দিপক ও কমল বলেন আমরা পৌরসভার
শেষ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এখানে কোন রকম উন্নয়ন আসতে দেখিনা, যদি পৌরসভায় কোন কাজের বরাদ্দ আসে তাহলে আমাদের গ্রামে আসতে আসতে শেষ হইয়া যায়। এছাড়া মশার কামড়েও আমরা দিশেহারা। কয়েল জালিয়েও মশা তাড়ানো যায় না।
পঞ্চবটি ঘোড়াকান্দা ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকার বাসিন্দারা জানায়, এর আগের মেয়রের আমলে যে রাস্তা করেছেন এখনও সেই রাস্তাগুলো আছে তবে এখন আর রাস্তাগুলো কোন উন্নয়ন হয়নি। আর নতুন কোন রাস্তার কাজ করে নাই। আমাদের দুর্ভোগের সীমা নেই। একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা দিয়ে হাটাচলা যায়না। বৃষ্টি আর ড্রেনের পানিতে এক হয়ে গিয়ে আমাদের বাড়িতে ঢুকে যায়। এছাড়া স্টেশন সড়কের পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দুষিত করছে । এই রাস্তায় দুর্গন্ধের কারণে চলাফেরা করতে সমস্যা হয়। আবার দেখা যাচ্ছে ময়লা আবর্জনা ফেলার জায়গাগুলো দখলও হয়ে যা
ভৈরব বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের আহমদ বলেন, প্রায়ই সড়কে পানির পাইপ বসানোর জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। কাজ শেষ হলেও তা মেরামত করা হয়নি। এছাড়া পাশাপাশি সড়কেই রাখা হয়ে থাকে নির্মাণসামগ্রী ও দোকানের মালামাল। এতে মূল সড়ক সরু হয়েছে। এতে প্রতিদিনই যানজট হয়। হাঁটাচলা করতেও পথচারীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ধুলা উড়তে থাকে সব সময়। আবার সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
ভৈরবের মানুষের বিনোদনের জন্য ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে কমলপুর এলাকার ১০ বিঘা জমির ওপর ২০১৮ সালে পার্কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২১ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি ঠিকাদার কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। পার্কটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা। ঠিকাদার জটিলতার কারণে তিন বছর পিছিয়ে থাকার পর অবশেষে ১০ ফেব্রুয়ারি পার্কটি জনস্বার্থে উন্মুক্ত করা হলো। ২০১৮ সালে পার্কটির কাজ শুরু করেন তৎকালীন পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ। কিন্তু জনে মনের প্রশ্ন হলো পৌরসভার জায়গায় ও অর্থায়নে নির্মিত পার্কটি প্রবেশ মুল্য ফ্রি করার চেয়ে ১০০ টাকা করা হয়েছে যা অনেক বেশী ।
উদ্ভোধনের পরে পার্কে ঘুরতে আসা পৌর এলাকার চন্ডিবের গ্রামের সোনিয়া আক্তার বলেন, একেতো ছোট পার্ক তাছাড়া পৌরসভার পার্ক সেখানে ছোট বড় সবাইকে ১০০ টাকা প্রবেশ ফ্রি দিতে হচ্ছে যা অনন্য পার্কে চেয়ে বেশী । এমনি অভিযোগ আরও বিনোদন প্রেমীদের । যা দেখার মতো কেউ নেই।
পৌরসভার কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পরে তেমন কোন নতুন কাজ হয় নাই । বার বার কাজের স্টিমেট দেওয়া হলেও তহবিলে টাকা না থাকায় কাজের টেন্টার করা যায়নি । তবে প্রায় সাড়ে তিন বছর পরে ছোট ছোট কাজের টেন্ডার হচ্ছে ।
ভৈরব পৌরসভার প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানাযায়, বর্তমানে পৌরসভার মোট রাস্তার পরিমাণ প্রায় ২৭কিলোমিটারের মধ্যে বেশীর ভাগই পাকা রাস্তা । ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারের জন্য রাজস্ব ও উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় চার কোটি টাকা কাজের কার্যাদেশ পত্র দেওয়া হয়েছে । যাহার কাজ ইতি মধ্যে শুরু হবে । যা ভৈরব পৌরসভার জন্য প্রয়োজনের তুলনায় যা একেবারেই কম।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বেনু বলেন,বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় ১০টি প্যাকেজের প্রায় ১২ কোটি টাকার রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজর কার্যাদেশ দেত্তয়া হয়েছে। যা ইতি মধ্যে কাজ শুরু হবে । তবে বর্ষার পরে বিশেষ বরাদ্ধে নতুন প্রজেক্ট ইউ,আই,জিপির অধিনে সব রাস্তারই কাজ করা হবে। ডাম্পিং ব্যবস্থা বা ময়লা আবর্জনার জন্য মেয়র বলেন এটা পৌরসভার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা । এই সমস্যা সমাধানের জন্য ভৈরবে প্রায় সাত একর জায়গার প্রয়োজন যা পৌরসভার ভিতরে থাকলেও পৌরসভার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে নিতে পারছে না । তবে আমরা চেষ্টা করছি ইউনিয়নের কোন জায়গায় নেওয়া যায় কিনা, যেখানে কোন মানুষ বাস না করে । পৌর পার্কের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এটা টেন্ডার দিয়েছি ,তারা আমাকে প্রতি বছর চল্লিশ লাখ টাকা দিচ্ছে সেই হিসেবে তারা প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা করেছে । এতে পৌরসভার কিছু করার নাই ।
ভৈরব শহরের সচেতন নাগরিকরা বলেন, পৌর এলাকার অবস্থা কোনোকালেই এত খারাপ ছিল না। এর আগে অনেক পৌর মেয়র বিভিন্ন ভাবে তাদেরমতো কৌশল করে বরাদ্দ নিয়ে কাজ করেছেন। বর্তমান মেয়র নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকার জন্য বরাদ্দ না পাওয়ার কথা বলেন। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে মেয়রকে আরও তৎপর হতে হবে মনে করেন ভৈরবের সচেতন মহল।
Leave a Reply