“শহীদদের স্মরণে ভৈরবের স্মরণসভা: নিহত ও আহত পরিবারগুলোর হৃদয়বিদারক আহাজারি “
নাজির আহমেদ আল-আমিন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণে এক আবেগঘন স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন।
এসময় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদুয়ান আহমেদ রাফি, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ, ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহিন মিয়া, শহীদ জোবায়েদের মা হোসনে আরা বেগম এবং নিহত কবির মিয়ার স্ত্রী সামিয়া বেগম।
স্মরণসভায় আহত মামুন, জাহিদ হোসেন হৃদয়, মেহেদী হাসান জিন্না, ছাত্র অর্ণসহ নিহতদের পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন। নিহত জোবায়েদের মা হোসনে আরা বেগম ও নিহত কবির মিয়ার স্ত্রী সামিয়া বেগম তাদের স্বজন হারানোর হৃদয়বিদারক কাহিনী তুলে ধরেন।
আহত মামুন বলেন, “ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুর্বৃত্তরা আমার এক হাত কেটে পঙ্গু করে দিয়েছে।” কবিরের স্ত্রী সামিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আগস্ট মাসে নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে আমার স্বামী নিহত হয়। সন্তানদের নিয়ে এখন আমি দিশেহারা।”
জোবায়েদের মা হোসনে আরা বেগম বলেন, “৪ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আমার ছেলে আর ফিরে আসেনি। শুনেছি যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে সে মারা গেছে। রাত ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ পাই। আমার উপার্জনশীল ছেলেকে হারিয়ে আমি এখন পাগলপ্রায়। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।” বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন এসময় তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “যুগে যুগে এদেশে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে, আর প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এবারের আন্দোলনেও ভৈরবসহ সারাদেশে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য আহত হয়েছে। ভৈরবের জোবায়েদ এবং কবিরের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট আমাদের হৃদয়ে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে। এখন আমাদের সকলের দায়িত্ব দেশকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা। সকলে মিলে কাজ করলে আমাদের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব।”
স্মরণসভাটি শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর মাধ্যমে শেষ হয়।
Leave a Reply