ভৈরবে কলেজের গাফিলতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় বসতে পারল না শিক্ষার্থী
আফসার হোসেন তূর্জা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ ও ফি জমা দিয়েও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি এক শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর নাম মার্জিয়া আক্তার। এতে সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।
মার্জিয়ার পরিবারের অভিযোগ, জেড রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও অবহেলায় এই ঘটনা ঘটেছে। মার্জিয়া গজারিয়া ইউনিয়নের গাজারিয়া গ্রামের স্বপন মিয়ার মেয়ে।
জানা যায়, ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামে অবস্থিত জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মারজিয়া আক্তার। নিয়ম অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার পূর্বে ফরম পূরনের জন্য অফিসে ২৫০০ টাকা জমা দেয় মারজিয়া। পরবর্তীতে কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান শেষে পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে জানতে পারেন তার এডমিট কার্ড আসেনি । পরে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হলে তারা বোর্ড থেকে প্রবেশপথ এনে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। পরবর্তীতে কলেজের অফিস সহকারি শফিকুল ইসলামের সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র দিবেন বলে মারজিয়াকে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু সর্বশেষ তাকে প্রবেশপত্র না দিয়ে পরীক্ষার আগের দিন জানানো হয়, কলেজের ফরম পূরণে ভুলের কারণে তার প্রবেশ পত্র হয়নি।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী মারজিয়া জানান, এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফি প্রদান করার পরেও আমি প্রবেশপত্র না পেয়ে আজকের বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। জীবন থেকে আমার একটি বছর ঝরে গেল। অথচ আমি টেস্ট পরীক্ষায় ৪.০৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আমার প্রস্তুতি আরো ভালো ছিল। সামনে আমার একটি ভালো ফলাফল আসতে পারতো। হয়তো আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির কারণে আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আমাকে ও আমার পরিবারকে সান্তনা দেওয়ার জন্য কলেজ থেকে প্রধান শিক্ষকসহ ৬/৭জন শিক্ষক আমার বাড়ি এসে আমাকে আগামী বছর বিনা ফি-তে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু আমি চাই যে পরীক্ষা চলে গেছে ঐটা বাদে পরবর্তী পরীক্ষা যেন দিতে পারি সরকার যেন সে।ব্যবস্থা করে দেন।
শিক্ষার্থী মারজিয়ার খালা রুমা আক্তার
বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পাওয়ায় আমার বড় বোনের মেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আমার বোনের মেয়ে ফরম পূরণ বাতিল হওয়ায় কলেজের শিক্ষকরা আমাদের বাড়িতে এসে ভুল স্বীকার করে। আমি চাই মার্জিয়া যেন বাকি পরীক্ষা দিতে পারে এ বিষয়ে যেন প্রশাসন ব্যবস্থা নেই।
এই ঘটনায় কলেজের অফিস সহকারি শফিকুল ইসলামের সাথে দেখা করে কথা করতে গেলে তাকে কলেজে পাওয়া যাইনি। এমনকি তার মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যাই।
এ বিষয়ে জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ জানান, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে অফিস সহকারি কম্পিউটারে ডাবল ক্লিক করায় ফরমটি বাতিল হয়ে যায়। যার কারণে আমরা শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বিষয়টির সমাধান করতে পারেনি। যার ফলে মারজিয়া এবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এই ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী। এর জন্য আমরা তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছি তারা তদন্ত রিপোর্ট দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যে শিক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তার অভিভাবক এবং তার কাছে আমাদের কলেজ কতৃর্পক্ষ ভুল স্বীকার করে ক্ষমাসহ পরবর্তীতে পরীক্ষা দেওয়ার সকল দায় দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস.এম কামাল উদ্দিন হায়দার মুঠোফোনে জানান, এডমিট কার্ড যখন বোর্ড থেকে প্রদান করা হয় সে সময় সাথে সাথে পরীক্ষার্থীদের মাঝে এডমিটকার্ড বিতরণ করা হলে এর মধ্যে যদি কারো এডমিট কার্ড না আসে বা ভুল থাকে তাহলে সাথে সংশোধনের সুযোগ থাকে। এছাড়াও তিনি আরো জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এডমিটকার্ড নিয়ে সাথে সাথে বিতরণ না করে পরীক্ষার একদিন আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। যার ফলে এডমিট কার্ড সংক্রান্ত কোনো ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ থাকে না। তবে মার্জিয়ার এডমিট কার্ড না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অফিস সহকারি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি বলে তিনি জানান।
Leave a Reply