ভৈরবে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম: কাজ শেষ না হতেই বিল ছাড়, শিক্ষার্থীর ঝুঁকিতে
নাজির আহমেদ আল-আমিন,ভৈরব
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার জামালপুর টেকনিক্যাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল ভাউচারে আগাম স্বাক্ষর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মো. আঃ হাকিমের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এতে করে ভবনের স্থায়িত্ব ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার নির্মাণকাজ ২০২৪ সালে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সৈকত এন্টারপ্রাইজ’। কাজ এখনো সম্পূর্ণ শেষ না হলেও প্রধান শিক্ষক বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, কাজের গুণগতমান প্রশ্নবিদ্ধ। নিম্নমানের বালি, রড, সিমেন্ট, সেগুন কাঠের পরিবর্তে মেহগনি কাঠ ও কমদামী থাই গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। সিডিউল চাইলে তা দেখানো হয়নি, বরং সংশ্লিষ্টদের অন্ধকারে রেখে বিল ভাউচার ও ছাড়পত্রে স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াদ হোসেন বলেন, আমাকেসহ কাউকে না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক বিল ভাউচারে স্বাক্ষর করেছেন, যা স্পষ্ট দুর্নীতির আলামত। আমি যখন শুনেছি শিক্ষা প্রকৌশলীসহ অন্যরা এসেছেন বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে তখন আমি প্রধান শিক্ষককে ফোন দিয়ে বললাম আমি আসছি বিদ্যালয়ে আমি স্বাক্ষর করবেন না। বাড়ি থেকে আসতে আমার যতক্ষণ লাগে। কিন্তু উনি আমার আসার আগেই স্বাক্ষর করে দিয়ে দিয়েছেন।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা বলেন, আমরা একাধিকবার এসে কাজের অগ্রগতি ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি, কিন্তু আমাদের কথা উপেক্ষা করা হয়েছে।
প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই অসমাপ্ত ভবনে ক্লাস করছে। ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল, রড বের হয়ে থাকা এবং খসখসে মেঝে দেখে অভিভাবকরা আতঙ্কিত।
স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ভবনে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দায় কে নেবে? আগেও এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল।
প্রধান শিক্ষক মো. আঃ হাকিম বলেন, আমি কনস্ট্রাকশনের কাজ বুঝি না। ভৈরব শিক্ষা প্রকৌশলী রেজাউল হোসেনের অনুরোধে আমি স্বাক্ষর দিয়েছি।
ভৈরব উপজেলা শিক্ষা প্রকৌশলী রেজাউল হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ, স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে তবে এখনো চেক ইস্যু করা হয়নি। কাজ পুরোপুরি বুঝে নেওয়ার পরেই চেক দেওয়া হবে। মান নিয়েও কোনো আপোষ করা হয়নি।
ঠিকাদার কোম্পানি সৈকত এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি অর্থ অপচয়ের এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত তদন্ত হওয়া উচিত। তারা প্রশ্ন তুলেছেন—কাজ শেষ না হলে কেন বিল ছাড়পত্র স্বাক্ষর হলো? কে এই অনিয়মে লাভবান?
সরকারি অর্থায়নে গঠিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অনিয়ম শুধু আর্থিক ক্ষতিই নয়, শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
Leave a Reply