নববর্ষের রঙে রাঙা ভৈরব: ত্রিবেণী পাড়ে হাজারো মানুষের প্রাণের উৎসব
ভৈরব প্রতিনিধি
নিশ্ছিদ্র নীল আকাশে রঙিন রোদ্দুর হাসে,
ভৈরব জেগে ওঠে আজ পহেলা বৈশাখে আশে।নদীর ঢেউ গায় গান, কাঁচা আমে গন্ধ ভাসে,আলপনায় পথ রাঙায়, হৃদয় আনন্দে হাসে। বাজে ঢাক, কাঁসর ঘঙঘঙ, নাচে লোকের সারি, ভৈরবের বুকে উঠে বৈশাখী উৎসবের ভারি।
শুভ নববর্ষের টানে, প্রাণে প্রাণে বাঁধন,
সুন্দর এ সকালের ছোঁয়া জুড়ায় মন-মাধবন। বৈশাখের উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়লো অলিতে-গলিতে, আর হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এক অভাবনীয় উৎসবে রূপ নেয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।
সোমবার পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) ভৈরব উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৮টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে জাতীয় সংগীত ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে শুভ সূচনা হয় দিনটির। এরপর পরিষদ চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নেয় প্রশাসন, বিচার বিভাগ, রাজনীতি ও শিক্ষাঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। র্যালির আগে উপজেলা কনফারেন্স রুমে ঐতিহ্যবাহী পান্তা-ইলিশ পরিবেশন করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রিদোয়ান আহমেদ রাফি, ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানি, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি হাজি মো: শাহীন, সাধারন সম্পাদক মো: মজিবুর রহমান, ভৈরব প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মো: সোহেলুর রহমানসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, বর্ষবরণকে ঘিরে ভৈরব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের আয়োজনে মেঘনা নদীর ত্রিবেণী সেতু এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। সকাল সাড়ে ৮টায় ছাত্র সংসদের কার্যালয় থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে মেলার মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়। মেলায় অংশ নেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম, উপজেলা ও পৌর বিএনপির সভাপতি সাধারন সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র সংসদের সভাপতি অনিক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সিয়াম।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলা পরিণত হয় মিলনমেলায়। শিশুদের আনন্দের জন্য ছিল নাগরদোলা, ঘোড়ার গাড়ি, চরকি, মিনি ট্রেন ও ওয়াটার রাইড। মঞ্চে একে একে পরিবেশিত হয় সংগীত, আবৃত্তি, লোকনৃত্য, বাউল গান ও পুতুলনাচ।
মেলার মূল আকর্ষণ ছিল লোকজ পণ্যের শতাধিক স্টল—যেখানে বিক্রি হচ্ছিল মাটির তৈরি পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, গৃহস্থালি সামগ্রী, মণ্ডা-মিঠাই, খৈ, খেলনা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। মেলার চারপাশে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়, যারা এসেছেন নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আশেপাশের এলাকা থেকে।
নিরাপত্তা নিশ্চিতে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সদস্য। তাদের তৎপরতায় সার্বিক পরিস্থিতি ছিল শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর।
বছরের প্রথম দিনে এভাবেই ভৈরব যেন গেয়ে উঠেছে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আনন্দের এক মহাকাব্য।
Leave a Reply