একই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চাকরি: অনিয়মিত অফিস! নীতিমালা উপেক্ষা নাকি বিশেষ সুবিধা?
নাজির আহমেদ আল-আমিন
এক জায়গায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করলে দায়িত্বশীলতা বাড়ে, নাকি দায়িত্ব পালনে শিথিলতা আসে? এমন প্রশ্ন তুলছেন ভৈরব উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দারা। নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময় পর বদলি হওয়ার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরের পর বছর একই উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর ফলে অনিয়মিত অফিস, সেবার মান ও দাপ্তরিক কার্যক্রমে নানামুখী সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভৈরব উপজেলায় বিভিন্ন দপ্তরে দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন অনেক কর্মকর্তা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এতে সেবা প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ বাড়ছে। এছাড়া সময়মতো অনেক কর্মকর্তারা অফিস করছে না। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।” এদের মধ্যে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বদন তৈয়বা,(তিনি ২০০১ সালে আসে ২০০৭ সালে চলে যায়। ২০১১ কয়েক মাস থাকে আবার ২০১৫ সালে আসিলে অদ্য ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান রয়েছে)।
সমাজ সেবা কর্মকর্তা রিফ্ফাত জাহান ত্রপা, তার নামের বোর্ডের তথ্য মতে (তিনি ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। আবার ২০১৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষার অধীনে উপজেলা একাডেমি সুপারভাইজার স্বপ্না বেগম,( তিনি প্রায় ১২-১৫ বছর পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামসুন নাহার তাসমিন, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলমান রয়েছে। আবার এই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করেনা বলে অভিযোগ রয়েছে।
কৃষি বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম, তিনি প্রায় ৪-৫ বছর ধরে চলমান রয়েছে। এছাড়া কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মিজানুর রহমানও রয়েছে কয়েক বছর ধরে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সার্টিফিকেট সহকারী প্রবাল কুমার রায়, রয়েছে প্রায় কয়েক বছর ধরে। আবার উনার ভৈরব থেকে বদলীর কথা হলেই তিনি অসুস্থ হয়ে পরেন। জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী মো: তুহিন,তিনিও অনেক বছর ধরে আছেন।
কোন সময়ই বন কর্মকর্তা বজলুর রহমান এর অফিসে আসলে তাকে পাওয়া যায় না, বন্ধ থাকে বন্ধ কর্মকর্তার অফিস। অনেক বছর ধরে আছে প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের দুইজন কর্মচারি ইসহাক ও কবির।
এদিকে আবার যার মূল দায়িত্ব থাকার কথা তাকেই নামে মাত্র রেখে বিশেষ কোন কারণে তার দায়িত্ব সহকারী প্রসাসনিক কর্মকর্তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
আবার দেখা যাচ্ছে অনেক কর্মকর্তা পৌরসভার কাউন্সিলর এর দায়িত্ব পালন করায় কর্মকর্তারা বেশীর ভাগ সময় অফিসে থাকেন না। যার কারণে সেবা নিতে আসা লোকজন ভোগান্তিতে পরছে।
কালিপুরের কয়েকজন বাসিন্দা সকালে নাগরিক সনদ এর জন্য আবেদন পত্রসহ বিভিন্ন কাজে ১১/১২ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব থাকা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিসে আসলে অফিসের এক জন বলেন, উনি বিকাল চারটার পরে অফিসে আসে তাই আপনারা চারটার পরে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাসেল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন এক জায়গায় থাকলে কাজের প্রতি আন্তরিকতা কমে যায়। কিছু কর্মকর্তা আছেন, যারা আমাদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। আমরা নতুন কর্মকর্তাদের আসার দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ী শাহ আলম মিয়া (৪৫) জানান, একই জায়গায় থাকলে অনেক সময় তারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করেন। আমরা দেখি, যাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়ার কথা, তারা বরং নিজেদের সুবিধার পেছনে বেশি সময় দেন।
একজন কর্মরত কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) আমাদের অনেকেই আসলে বদলির বিষয়ে আগ্রহী নয়। এখানে থাকলে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে থাকা যায়। তবে সবসময় এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখা উচিত নয়।
আরেক জন কর্মকর্তা জানান, বাড়ি ও অফিস কাছাকাছি হওয়ায় এই উপজেলা থাকলে সুবিধা হয় এবং অনেকদিন থাকা যায়। এছাড়া আমরা চাচ্ছি জনগণকে সর্বোচ্চ সেবাটা দেওয়ার জন্য।
আরেক জন কর্মকর্তা বলেন, সরকার বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি আমাদের বদলী করেন তাহলে আমরা থাকতে পারবো না। চলে যেতে হবে। তাই আমরা বেশী সময় ধরে থাকছি।
এছাড়া বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের বেশী সময় ধরে থাকার ব্যাপারে তারা বলেন, আমাদের আর কোন পদে উন্নত হবে না,একই উপজেলা চাকুরীর শেষ হয়ে যাবে। তাই আমাদের বদলী হয় না।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, উপজেলায় বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিভিন্ন কর্মকর্তারা কাজ করেন। যদি এমন কোন অনিয়ম বা অভিযোগ থাকে তাহলে তাদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নিবেন। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আমার কাছে কোন কর্মকর্তার বিষয়ে অভিযোগ আসিলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের নিকট জানানো হবে।
“নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের প্রবণতা ভৈরব উপজেলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপই নয়, রাজনৈতিক প্রভাব ও স্বজনপ্রীতির শৃঙ্খল ভাঙতে হবে। বদলির নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়িত হলে সেবার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সচেতন মহল।
Leave a Reply