মাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে শিশুকে অপহরণ, এক মাস পর উদ্ধার!
নিজস্ব প্রতিবেদক
মাকে প্রেমের জালে ফেলে শিশু কণ্যা সারা মণিকে অপহরণ করার একমাস পর (২৫ ফেব্রুয়ারি) মঙ্গলবার ব্রাম্মণবাড়িয়ার জেলার সরাইল থানার বৈশর গ্রাম থেকে উদ্ধার করেছে ভৈরব থানা পুলিশের সদস্যরা। সেই সাথে অপহরনের সাথে জড়িত দুলাল মিয়ার স্ত্রী রুনা বেগম (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানাযায়, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার দড়ি চরিয়া কোনা গ্রামের রসিদ মিয়ার স্ত্রী ঋতু বেগম আর তাদের আড়াই বছরের কন্যা সন্তান সারা মণি। কিন্তু কণ্যা সন্তান সারা মণি বয়স যখন তিনমাস তখন রসিদ মিয়া ও তার স্ত্রী ঋতু বেগমের তালাক হয়ে যায়।
এদিকে মা ঋতু বেগম নিজে চলাচলের জন্য
কটিয়াদী চরি পাড়া একটি বয়লারে কাজ নেয়। সেই সুবাদে ঋতুর কাছে দুলালের নিয়মিত আসা যাওয়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর ভাল টাকার বেতনের চাকরি দেয়ার কথা বললে রাজি হয়ে গেল ২৩ জানুয়ারি ভৈরবে আসে তার শিশু সন্তানসহ ঋতু বেগম।
পরে ঐ রাতে ভৈরব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুলাল মিয়া ঋতু বেগমকে একটি চায়ের দোকানে
বসিয়ে চিপস কিনে দেয়ার কথা বলে তার শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যায় অপহরণকারী দুলাল মিয়া। পরে ওই দিন রাতেই ভৈরব থানায় একটি অপহরণের জিডি মামলা করে মা ঋতু বেগম
শিশুটির পারিবারিক ও ভৈরব থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গেল এক মাস আগে শিশুটির মা ঋতু বেগম বাদি হয়ে একটি অপহরণ জিডি মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর থানা পুলিশের সহযোগিতায় এক মাসের বেশি সময় নিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ভৈরব থানার এসআই এমদাদুল কবির, শাহাদত হোসেন, ফরিদুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে শিশুটি স্বজনদের সহায়তায় সরাইল থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে।
এ ঘটনায় শিশুটির নানি সাহেদা বেগম অপহরণকারী দুলাল মিয়াকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। মামলা তার সহধর্মিণী রুনা বেগম ও শিশুটিকে কিনে রাখা নারী মাজেদা বেগমকেসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে অভিযুক্ত প্রধান আসামি সরাইল সুরা বাড়ির দুদু মিয়ার ছেলে দুলাল মিয়া (৪৮)। এ ঘটনায় জড়িত অপহরণকারী দুলাল মিয়ার স্ত্রী রুনা বেগম (২৫) কে গ্রেফতার করা হয়েছে।
থানা পুলিশ আরও জানায়, অপহরণকারী দুলাল একজন লম্পট ব্যক্তি ৷ তার একাধিক স্ত্রী ও প্রেমিকা রয়েছে। অপহরণকারী দুলাল মিয়া ও শিশুটির মা ঋতু বেগমের দীর্ঘদিনে প্রেমের সম্পর্কও ছিলো।
এ বিষয়ে শিশুটির নানি সাহেদা বেগম বলেন, আমার নাতনিকে ৩ মাসের রেখে তার বাবা রসিদ মিয়া তার মাকে ছেড়ে যায়। আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাপড় বিক্রি করে নাতনী ও মেয়ের খরচ যোগায়। আমার মেয়েকে ভাল কাজ দেয়ার কথা বলে লোভ দেখিয়ে ফসকে ভৈরব এনে আমার নাতনিকে অপহরণ করে দুলাল। দুলালের ব্যবহৃত টিকটক আইডি থেকে ছবি সংগ্রহ করে ও আমাদের কটিয়াদি স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেন এবং ভৈরব থানা পুলিশের সহযোগিতায় আমার নাতনিকে উদ্ধার করি। আমি অপহরণকারী দুলালসহ জড়িত সবার শাস্তি কামনা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুলালের স্ত্রী রুনা বেগম বলেন, এক মাস আগে শিশুটিকে নিয়ে আসে আমার স্বামী। সে জানায় শিশুটির তার বোনের মেয়ে। আমার কাছে নিয়ে আসে শিশুটিকে কিছুদিন লালন পালন করে দেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে আমি শিশুটিকে দিয়ে আসার জন্য বললে সে আমার এখানে থেকে শিশুটি নিয়ে চলে যায়। এরপর আমি কিছু জানি না।
অভিযুক্ত দুলালের বোন সেলিনা বেগম বলেন, আমার আরেক বোনের মাধ্যমে বাচ্চার বিষয়টি জানতে পারি। শুনেছি শিশুটি ৭৫ হাজার টাকা বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তখন আমি তাদের বলি সত্য কখনো গোগন থাকে না এবং কাজটি অন্যায় হয়েছে। পরবর্তী পুলিশ আমার কাছে আসলে আমি আমার বোনের মুখে যা কথা শুনেছি ঐ কথার সূত্র ধরেই বাচ্চাটি উদ্ধার করতে পুলিশকে আমি সাহযোগীতা করি। আমি এর সাথে জড়িত না এমকি আমার ভাইয়ের সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নাই।
এ বিষয়ে ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে আশুগঞ্জে পরে সেখান থেকে দুলালের বোন ও তার স্ত্রীর মাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুলালের স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply