পাওয়ার অব অ্যাটর্নি জালিয়াতি: প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর নামে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে
নাজির আহমেদ আল-আমিন
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (ভূমির ক্ষমতাপত্র) নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে স্ত্রীর নামে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে শহরের পঞ্চবটী এলাকার সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই হিসেবে ভুক্তভোগী মো. সুজন মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা (২৩ ফেব্রুয়ারি) রবিবার দুপুরে পঞ্চবটী এলাকায় নিজ বসতভিটায় সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ভুক্তভোগী সুজন মিয়া জানান, শহরের কমলপুর পঞ্চবটী ঈদগাঁ মাঠ সংলগ্ন এসএ খতিয়ান নং ১০০ ও ৩০৫, আরএস খতিয়ান নং ১৩৪ এবং এসএ দাগ নং ৭১৯২ ও ৭১৯৪ এবং বি,এস/আর,এস দাগ নং ৪১৬৩-এর অধীনে থাকা ২.৫০ শতাংশ জমি কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন সাইফুল ইসলাম।
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর ভৈরব সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করা দলিল নং ৭৬৩৪ এর মাধ্যমে সাইফুল ইসলাম একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নেন। এরপর এক বছর পর, ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর ও ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল যথাক্রমে দলিল নং ৭৮৯৭/২২ ও ২৭৫১/২৩ এর মাধ্যমে তিনি তার স্ত্রী মোছা. রোকেয়া বেগম (সাদিয়া)-এর নামে সাফ কবলা দলিল করে জমিটি দখলের চেষ্টা করেন।
শুধু সুজন মিয়াই নন, স্থানীয় আরও কয়েকজন সাইফুল ইসলামের প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পঞ্চবটী গ্রামের ইটালি প্রবাসী সোহাগ আহমেদ জানান, তার কেনা জমির একাংশও সাইফুল ইসলাম জোরপূর্বক দখল করেছেন এবং টিনের বেড়া দিয়েছেন। পাঁচ বছর আগে বাসের হেলপার থাকা সাইফুল এখন প্রতারণার মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
পঞ্চবটী গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন রিটন জানান, সাইফুল ইসলাম তার কাছেও অন্য একটি জায়গার কথা বলে কৌশলে পাওয়ার অব অ্যার্টনী নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অন্য একটি বসতবাড়ি সাইফুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগম সাদিয়ার নামে দলিল করে জোরপূর্বক জায়গা দখল করে। এছাড়াও সাইফুল ইতিপূর্বে রহমান মিয়া নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আমাদের জায়গা আছে বলে জানান। আমি চাইলে সে সমস্ত কাগজপত্র তুলে জায়গা বের করে দিবে, বিনিময়ে তাকে আমার একটা অংশ দিতে হবে। আমি সম্মত হলে সে জায়গার সকল কাগজপত্র তুলে এনে রহমান বাড়িতে গিয়ে ২ দফায় আমিন নিয়ে মাপ দিলে আমরা নিশ্চিত হই পৈতৃক সুত্রে এখানে আমাদের জায়গা আছে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হয় আবারো মাপ দিতে হবে। ৩ দফায় মাপের দিন আমরা বুঝতে পারি সাইফুল ওই পক্ষের সাথে মিলে প্রতারণার আশ্রয় নেন। তখন মাপামাপি থেকে চলে আসি। সে আমার মত আরো কয়েক জনের সাথে এমন প্রতারনা করেছে এমন ঘটনারও খবর পেয়েছি।
অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সুজন মিয়ার কাছ থেকে বৈধভাবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও দলিল নিয়েছেন। একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তা কামনা করেন। এ বিষয়ে ভৈরব পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, “জায়গা কেনাবেচার বিষয়টি আমি জানি। যদি প্রতারণার অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে দুই পক্ষের মধ্যে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।”
ভুক্তভোগীরা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যাতে নিরীহ মানুষ প্রতারণার শিকার না হন এবং তাদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পান।
Leave a Reply