চিকিৎসা নয়,ভোগান্তির কেন্দ্র হয়ে উঠছে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!
কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা
নাজির আহমেদ আল-আমিন
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের পরও কার্যক্রম চলছে ৫০ শয্যার সীমাবদ্ধতায়। দীর্ঘ দুই বছরেও প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় এবং জনবল সংকট দূর না হওয়ায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন শত শত রোগী সেবা নিতে ভিড় করেন। শহরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন এবং আশপাশের কয়েকটি উপজেলা থেকে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে হাসপাতালের বর্তমান জনবল ও অবকাঠামো সীমাবদ্ধতায় সেবা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এখানে ২৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১৩টি পদ শূন্য। এর সঙ্গে ছুটি, বদলি এবং প্রশিক্ষণের কারণে আরও কয়েকজন চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় বর্তমানে মাত্র ৬ জন চিকিৎসক কাজ করছেন। এতে চিকিৎসকরা হিমশিম খাচ্ছেন। পাশাপাশি টেকনিশিয়ান সংকট, পরীক্ষার সরঞ্জামের অভাব, যেমন রিএজেন্ট, এক্স-রে ফিল্ম, আলট্রাসনোগ্রাম ও ইসিজি পেপার না থাকায় রোগীরা নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওপর।
হাসপাতালে আসা রোগীরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসক কম আছে আর যারা আছে তারাও কয়েকজন ছুটিতে আছে আবার সময়মতো হাসপাতালে আসেনা। এছাড়া দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এক রোগী বলেন, “এত দূর থেকে এসে দেখলাম, ডাক্তার নাই। পরীক্ষা করানোর যন্ত্রপাতিও নাই। বাধ্য হয়ে বাইরের ক্লিনিকে যাচ্ছি, যেখানে খরচ অনেক বেশি।”
আরেকজন জানান, “হাসপাতালের উন্নয়ন হয়েছে শুনেছিলাম, কিন্তু এখন দেখি পরিস্থিতি আরও খারাপ।
শিমুলকান্দী থেকে আসা রোগী হামিদা বেগম (৫০) বলেন, চার-পাঁচ মাস ধরে হাসপাতালে আইতেছি, কিন্তু আমরা কোন ঔষধ পায়তেছিনা।
মোছা. লাইলী বেগম (৪২) জানান, হাসপাতালে কোনো প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যায় না। বাইরের দোকান থেকে কিনতে হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে এসব ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়ার কথা।
মো.জাহিদুল ইসলাম (৩৫) ও হোসনেয়ারা বেগম (৫০) বলেন, সকাল আটটা থেকে হাসপাতালে বসে আছি, কিন্তু এখনো কোনো ডাক্তার আসেনি। ডাক্তার না থাকায় আমরা অনেক সময় ধরে বসে আছি। আমাদের মতো গরিব মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসি, কিন্তু সেবা পাওয়া যেন ভাগ্যের ব্যাপার।”
রফিকুল ইসলাম (২৮)বলেন, রোগ নির্ণয়ের জন্য যে পরীক্ষাগুলো দরকার, সেগুলোর অনেকটার সমস্যা। আমাদের প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়, যেখানে অনেক বেশি টাকা লাগে। গরিব মানুষ কীভাবে চিকিৎসা নেবে?
হাসপাতালে আসা স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, “এত টাকা খরচ করে ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলো, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দ্রুত জনবল নিয়োগ আর সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে।”
নাম না প্রকাশে এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে কাজ করছি। কিন্তু রোগীর চাপ এত বেশি যে সব রোগীকে সেবা দেওয়া খুবই কঠিন। হাসপাতালে আরও চিকিৎসক প্রয়োজন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, “আমরা চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। তবে জনবল সংকট ও সরঞ্জামের অভাবে পুরোপুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংকট কাটিয়ে দ্রুত হাসপাতালটি পূর্ণ কার্যক্রমে চালু করবে এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী রোগী ও স্থানীয়দের।
Leave a Reply