ভৈরবে জমি বিক্রির টাকা নিয়েও দলিল না করার অভিযোগ, সবজি ক্ষেতও নষ্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভৈরবে জমি বিক্রয়ের টাকা নিয়ে দলিল না করে দেওয়াসহ সবজি ক্ষেত নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এমাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি মো. নুরুজ্জামান ওই উপজেলারই বাসিন্দা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার একই ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেব মিয়ার ছেলে এমাদ মিয়া ২০১৬ সালে একই গ্রামের মো. নুরুজ্জামানের কাছে আকবরনগর মৌজার আরএস ৬১৫ ও ৬১৮ দাগের অধীনে মোট ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ জমি এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায় জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। ধাপে ধাপে ওই টাকার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। তখন তাকে জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু খারিজ না থাকার তখন জমি দলিল করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান সহযোগীতা করে জায়গার খারিজ করে দিলেও অভিযুক্ত এমাদ মিয়া ঐ জমি দলিল করে না দিয়ে তালবাহানা শুরু করেন। পরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ
স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সময় দরবার শালিস করে বিষয়টি সমাধান করে দেই। কিন্তু দীর্ঘ ৯ বছর পার হয়ে গেলেও এমাদ মিয়া এখনো দলিল সম্পাদন না করে দেওয়ার এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ।
জমিটি ভুক্তভোগীর দখলে থাকাই তিনি বিভিন্ন ফসল ফলান ও গাছগালা লাগান। কিন্তু শনিবার (৬ জুলাই) জমি বিক্রেতা এমাদ মিয়া তার ছেলে ও নাতিদের নিয়ে ওই জমির চার দিকের বেড়া, সবজি গাছসহ কয়েকটি ছোট-বড় গাছ কেটে নষ্ট করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান অভিযোগ করেন বলেন, আমি ৯ বছর আগে জমি কিনার জন্য এমাদ মিয়াকে টাকা দেই। টাকা নেওয়ার পর জমিটি সে আমাকে দখল বুঝিয়ে দেই। কিন্তু খারিজ না থাকায় তখন দলিল করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে আমি সহযোগীতা করে জমিটির খারিজ করে দিলেও সে আমাকে আর জমিটি দলিল করে না দিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেছে। পরে বিভিন্ন সময় দরবার শালিস হলে এমাদ মিয়া জমিটি দলিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও আজ পর্যন্ত দেইনি। এতে দীর্ঘ ৯ বছর সময় পার হয়। কিন্তু জমিটির দখল আমার কাছে থাকায় এতোদিন আমি জমিটিতে সবজি চাষ করে আসছিলাম।
কিন্তু ৬ জুলাই (শনিবার) সকালে হঠাৎ এমাদ মিয়া তার ছেলে ও নাতিদের নিয়ে ওই জমিতে গিয়ে জমির চারপাশের বেড়া ভেঙে দেন এবং অন্তত ছোট-বড় ১০-১৫টি গাছ উপড়ে ফেলে এবং কেটে নষ্ট করে দেন। একতো সে টাকা নেওয়ার পর এতোদিন হলো জমি দলিল করে দিচ্ছে না আবার সে আমার লাগানো ক্ষেতও নষ্ট করলো। এ ঘটনায় আমি আতঙ্কে রয়েছি। আমি দ্রুত দলিল সম্পাদনের পাশাপাশি সবজি বাগান নষ্ট করার ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি জানায়।
স্থানীয়রা জানায়, জমিটি বর্তমানে নুরুজ্জামানের দখলে রয়েছে এবং সেখানে তিনি সবজি চাষ করে আসছেন। জমির দলিল সম্পাদন না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক ভাবে বিরোধ চলে আসছে। তবে সম্প্রতি তা চরমে পৌঁছায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, আমার চাচা এমাদ মিয়া জমি বিক্রি করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু আজও তিনি দলিল করে দেননি। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
অভিযুক্ত এমাদ মিয়া অবশ্য জমি বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি জমির টাকা নিয়েছি ঠিকই, তবে আমার বিপদের সময় আমি টাকা পাইনি। তবুও পরবর্তীতে আমি ওদের বলেছিলাম জমিটা দলিল করে নিতে কিন্তু তখন ওরাই দলিল করে নেয়নি। যার কারণে পরবর্তীতে আমি আবার টাকা ফেরত দিয়ে জমিটি ফেরত নিতে চাইছিলাম কিন্তু তারা টাকাও ফেরত নেই নাই। জমিটি অবশ্য তাদের দখলেই আছে কিন্তু জমিটি এখন আমি তাদের আর দলিল করে দিবো না। এছাড়া তিনি বলেন, সকালে আমার ছেলে ও নাতিরা জমিটির বেড়া ও গাছপালা হয়তো ভেঙে থাকতে পারে।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply