ভৈরবে মেঘনা নদীতে স্কুলছাত্রী নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর মরদেহ উদ্ধার
নিজস্ব প্রতিবেদক
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলায় মেঘনা নদীতে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হওয়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তৈয়বার (১০) মরদেহ নিখোঁজের ৩২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধা ৬টার দিকে ভৈরবের ত্রি-সেতু এলাকার হাবিলদার আব্দুল হালিম রেলওয়ে সেতুর নিচ থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে সোমবার (৯ জুন) সকাল ১১টার দিকে গোসল করার সময় নদীর প্রবল স্রোতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় তৈয়বা। সে ভৈরব পৌরসভার মুশকিলা হাটি এলাকার বাসিন্দা কামাল মিয়ার মেয়ে এবং স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে মা কবিতা বেগম ঘরের কাজ সেরে ছোট মেয়ে মরিয়ম (৬), মেঝো মেয়ে তৈয়বা (১০) ও বড় মেয়ে টিয়াকে (১৪) সঙ্গে নিয়ে মেঘনা নদীতে গোসল করতে যান। সঙ্গে ছিল ধোয়ার জন্য কিছু কাপড়।
নদীর পাড়ে মা কাপড় ধোয়ায় ব্যস্ত ছিলেন, আর মেয়েরা কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে নদীতে নেমে বল খেলছিল। খেলার একপর্যায়ে স্রোতের টানে বলটি ভেসে গেলে মেয়েরা সেটি ধরতে এগিয়ে যায়। এসময় তিন বোনই হঠাৎ পানির গভীরে তলিয়ে যায়।
স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এসে বড় বোন টিয়া ও ছোট বোন মরিয়মকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তবে তৈয়বা নদীর গভীর স্রোতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ থাকে।
টিয়াকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় এবং প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়ি ফেরত আনা হয়।
খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভৈরব নদী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরে ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলও অভিযানে অংশ নেয়। কিন্তু নদীর প্রবল স্রোত, সেতুর পিলারের নিচের ঘূর্ণিপাক এবং জলচাপের কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অভিযান চালানো হয় এবং পরদিন সকালেও তা অব্যাহত থাকে। অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধা ৬টায় দিকে তৈয়বার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত তৈয়বার বাবা কামাল মিয়া বলেন, “আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে নিয়ে গোসল করতে গিয়েছিল। ওরা সাঁতার জানত না। খেলতে গিয়ে বল স্রোতে ভেসে গেলে তা আনতে গিয়ে একসঙ্গে পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয়রা দুজনকে উদ্ধার করলেও আমার মেঝো মেয়ে তৈয়বাকে আর বাঁচানো গেল না।”
ময়মনসিংহ ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস পরিদর্শক আজিজুল হক রাজন দৃশ্যপট নিউজকে বলেন, “খবর পাওয়ার পরই আমাদের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার অভিযান শুরু করে। নদীর প্রবল স্রোত ও ঘূর্ণিপাক থাকায় কাজ করতে সমস্যা হচ্ছিল। আমরা অবশেষে আজ সন্ধায় মেয়েটির মরদেহ উদ্ধার করেছি।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নদীর পাড়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
Leave a Reply