নাজির আহমেদ আল-আমিন,ভৈরব
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পরিবেশ বিধ্বংসী ও নিষিদ্ধ কারেন্ট এবং রিং জাল। প্রশাসনের চোখের সামনেই এসব জাল বেচাকেনা চললেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরা। অভিযান চালানো হলেও তা সীমাবদ্ধ থাকে কয়েকটি ছোট দোকান এবং নদীতে থাকা গরিব জেলেদের উপর। এতে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভৈরব বাজারে বিভিন্ন জাল-সুতার দোকানে প্রকাশ্যে কারেন্ট ও রিং জাল বিক্রি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ব্যবসায়ী প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা। অভিযানের সময় নাটকীয়ভাবে দুই-একটি দোকানে সামান্য জরিমানা করেই অভিযান শেষ করা হয়। অন্যদিকে, নদীতে থাকা সাধারণ জেলেদের ওপর চলে কঠোরতা—জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, গুনতে হয় মোটা অংকের জরিমানা।
নদীতে মাছ ধরা জেলেরা বলছেন, আমরা নদীতে পেট চালানোর জন্য মাছ ধরি। কেউ কেউ হয়তো এই জাল ব্যবহার করে, কিন্তু আমরা কি বড় বড় দোকান থেকে কিনি না? তাহলে শুধু আমাদের উপর এই শাস্তি কেন?
অভিযান দিলে আগে দোকানে দেন পরে নদীতে দিবেন।
জেলেরা আরও জানায়, জাল ব্যবসায়ীরা অনেকে প্রশাসনকে মেনেজ করে তাদের ব্যবসা করছেন। আবার নদীতে আমাদের মধ্যেও সমস্যা আছে। তারাও প্রশাসনের লোকজনকে মেনেজ করে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরছে। আবার দেখা যাচ্ছে যারা মেনেজ হয়না তাদেরকে জরিমানাসহ জাল নিয়ে যায়।
ভৈরব বাজারে জাল ব্যবসায়ীদের একজন জানান,আমরা তো শুধু বিক্রি করি। বাজারে এসে অনেকেই এসব জাল চায়। প্রশাসন যদি চায়, তাহলে আগে আমদানির উৎস বন্ধ করুক।
স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এটা শুধু জাল নয়, নদীর জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের প্রশ্ন। কিন্তু শুধু জেলেদের টার্গেট করে অভিযান হলে সমস্যার সমাধান হবে না। জাল সরবরাহকারী ও বড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক জানান, চায়না দুয়ারি বা রিং জাল দেশে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আমরা বাজারে প্রতিনিয়তই অভিযান করছি ও করবো।
জালের গোডাউনে জাল সরবরাহ নিয়ে তিনি বলেন, যদি এমন কোন খবর পাওয়া যায় যে জাল গোডাউনে থাকে তাহলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের কর্তৃপক্ষকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ভ্রামমান আদালতের মাধ্যমে সাজা ও জরিমানা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। তবে সব সময়ই তো সব জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তারপরও অভিযোগ পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।
স্থানীয়দের দাবি, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় না এনে গরিব জেলেদের বিরুদ্ধে একচোখা আচরণ নদী ও সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে নদীর মাছ ও জেলেপেশার ভবিষ্যৎ গভীর সংকটে পড়বে।
Leave a Reply