মৌসুম সংকটে দেশি মাছের ঘাটতি, ভৈরবে বাড়ছে সব ধরনের মাছের দাম
নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব
মৌসুম সংকটে দেশি মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। নদ-নদীতে দেশি মাছের স্বল্পতা, বর্তমানে মাছের প্রজনন মৌসুম এবং বাজারে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে বাজারে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা। সরবরাহ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ভৈরবের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছের আমদানি কম থাকায় বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে দেশি কই, শোল, বাইম, চিংড়ি,পাপদা মাছের দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে দাম নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে রীতিমতো তর্ক লেগে যায়। আগে যে কই মাছ ২২০ টাকায় বিক্রি করতাম, এখন সেটা ৪০০ টাকা চাইলেও অনেকে ক্ষুব্ধ হন।”
জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে মাছের দাম কিছুটা এভাবে উঠেছে: মাছের বর্তমান দাম (প্রতি কেজি) দেশি কই ৫০০-৬০০ টাকা, মাগুর ৮০০–১,১০০ টাকা,শোল ৬০০–৮০০ টাকা,পাবদা ৪০০–৪৫০ টাকা, চিংড়ি ১২০০–১৪০০ টাকা, রুই ৩৮০–৫০০ টাকা,গুলসা ৮০০-১০০০ টাকা।
পুরাতন ফেরিঘাটের মিনা বাজারের মাছ বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, আগে দিনে ২০-৫০ কেজি দেশি মাছ বিক্রি করতাম, এখন সেটা ১০-১৫ কেজিতে নেমে এসেছে। দাম বাড়ায় ক্রেতারা মাছ কিনতে ভয় পাচ্ছেন।
মাছের আড়ত এলাকার একজন আড়তদার মো. হানিফ বেপারী জানান, এই সময়ে নদীতে মাছের সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও প্রভাব পড়ছে। তবে প্রতিদিন ভৈরবে চাষের মাছ আমদানী হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে।
স্থানীয় জেলে মো. শহিদ ইসলাম বলেন, নদীতে আগের মতো মাছ নেই। একেকবার জাল ফেলি, মাছ উঠেও না। আগে যেখানে দিনে ৮-১০ কেজি ধরতাম, এখন ২ কেজিও ভাগ্যে জোটে না।
পৌর এলাকার ক্রেতা রাশেদ মিয়া বলেন, দেশি মাছ এখন গরুর মাংসের চেয়েও দামী। আগে ৫০০ টাকায় সারা পরিবারের জন্য মাছ হয়ে যেত, এখন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয় বণিক জানান, বর্তমানে বাজারে দেশী মাছের যোগান কম ও চাহিদা বেশী থাকার কারণে মাছের দামটা বেশী আছে। সামনে কয়েকদিন পরে যখন বৃষ্টিপাত শুরু হবে বর্ষাকাল আসবে তখন মাছও ধরা পড়বে আর দাম স্বাভাবিক ভাবে কমে যাবে। বর্তমানে সময়ে পুকুর কাটা বেশী হয়ে থাকে তাই চাষের মাছের আমদানি হওয়ায় দেশী মাছের দামটা বেশী হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, হাওড় অঞ্চলে মে- জুন মাস পর্যন্ত মাছ ধরা সরকারি ভাবে বন্ধ করেছে। সেই হিসেবে সামনের সময়ে প্রচুর দেশীয় মাছ বাজারে আসবে আর দামও কমে পাওয়া যাবে।
সুশীল সমাজের লোকজন বলছেন, সরকার যদি মাছ ধরার মৌসুমে জেলেদের জন্য বিকল্প আয় ও ভর্তুকি সহায়তা চালু করে এবং আড়তদারদের দাদন প্রথা নিয়ন্ত্রণে আনে, তাহলে বাজারে স্বস্তি ফিরতে পারে।
Leave a Reply