ভৈরবে ঘুষ নিয়ে অটোচালক দম্পতির নামে মাদকের মিথ্যা মামলা: এসআই আল মামুন ক্লোজড
ভৈরব প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক অটোচালক দম্পতির বিরুদ্ধে মাদক মামলায় হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুনকে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। (৪ এপ্রিল) শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বিপিএম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এস আই আল-মামুন ভৈরব থানায় কর্মরত ছিলেন।
তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। পুলিশের কোনো সদস্য যদি দায়িত্বের অপব্যবহার করে থাকেন, তা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নিরপরাধ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটি আমরা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে চাঞ্চল্যকর একটি অভিযোগ। ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী ও তার স্ত্রী স্মৃতি বেগম শহরের কালিপুর উত্তর পাড়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভৈরব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারা জানান, মোহাম্মদ আলীর বড় ভাই আকবর আলীর ঘর থেকে পুলিশ ১০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করলেও, পারিবারিক বিরোধের জেরে আকবরের বদলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমাদের নামে মামলা না দিতে পুলিশ ১ লাখ টাকা দাবি করে। আমরা দরিদ্র মানুষ, আমি অটো চালাই, স্ত্রী পলিথিনের বস্তা সেলাই করেন। ঘুষ দিতে না পারায় রাতের আঁধারে বাড়িতে হানা দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, পরে পাশের বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা ধার করে ছাড়া পান। মামলার ভয় দেখিয়ে পুলিশ পক্ষপাতমূলকভাবে মাদক ব্যবসায়ী ভাই ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আঁতাত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা সাজায়।
ঘটনার পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে এসআই আল মামুনকে ক্লোজড করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
অভিযুক্ত এসআই আল মামুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মামলার বাদী আমি নই। বাদী হচ্ছেন এসআই শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
শুধু ভৈরবে না, এস আই মামুন এর আগে সাভার থানায়ও অপকর্মে লিপ্ত ছিলো। যা হলো-
সাভারে পুলিশের এসআই আল মামুন কবিরের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ ঢাকার সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আল মামুন কবিরের বিরুদ্ধে নির্যাতন, অর্থ আদায় এবং প্রভাব খাটানোর একাধিক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুসারে, গাইবান্ধার দুই ভাই জিহাদ হাসান শান্ত ও হাসিব হাসান প্রান্তের মধ্যে ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলায় অভিযানে গিয়ে বড় ভাইকে আটক করে নির্যাতন চালান এসআই মামুন। পরে ৯ হাজার টাকা নিয়ে বড় ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযোগ জানালে এসআই মামুন ঘটনার দিন উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার নাম করে জিহাদের বাবাকে থানায় ডেকে জাল জিডিতে স্বাক্ষর করান এবং ভিডিও ধারণ করেন। পরে সেই জিডি সাংবাদিকদের কাছে পাঠিয়ে পাল্টা প্রচারণা চালান।
এর আগেও গত ডিসেম্বর মাসে প্রাইভেটকারে সাদা পোশাকে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় এক শ্রমিক ও সাংবাদিককে হয়রানি ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
অন্যদিকে এসআই শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, “মাদক উদ্ধারের একদিন পরেই নিয়ম অনুযায়ী মামলা করেছি। কার মাদক দিয়ে কাকে মামলা দিয়েছি, তখন তো কেউ এসে আমাকে কিছু বলেনি।”
এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানি বলেন, “এই কাজ যদি তারা করে থাকে, তাহলে তা তাদের ব্যক্তিগত দায়। ডিপার্টমেন্ট এই দায়িত্ব নেবে না।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলেন, “দুর্নীতি ও হয়রানির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে প্রশাসনকে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো নিরীহ পরিবার এমন অন্যায়ের শিকার না হয়।”
Leave a Reply