হাইব্রিড নেতা ইস্যুতে
ভৈরবে দুইদিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, দোকানপাট ঘরবাড়ি ভাংচুর
ভৈরব প্রতিনিধি
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিএনপির নেতাকে ‘হাইব্রিড’ নেতা বলার জেরে আবারও দ্বিতীয় দিনে দফায় দফায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। (১৯ জানুয়ারি) রবিবার সারাদিন শহরের চন্ডিবের উত্তর পাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে । দুই দিনে দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছে ২০ জন। এছাড়া দোকানপাট, ঘরবাড়ি, ফার্মেসী ও ক্লিনিক ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুরে একই ঘটনার জেরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। এতে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলেন। নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় পক্ষ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাত পর্যন্ত ইট পাটকেল, কাচের বোতল ও ফটকাবাজি দিয়ে ডিল মেরে সংঘর্ষের সৃষ্টি করে। পরে সেনাবাহিনীসহ অনন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা গেছে, পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চন্ডিবের উত্তরপাড়া এলাকাটি অবস্থিত। ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুলিয়ারচর উপজেলা বিএনপির এক নেতা ভৈরব উপজেলা গতকাল শনিবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম ওই নেতাকে দেখতে হাসপাতালে যান। নেতার আগমন উপলক্ষে ফুল হাতে অনেকে সকাল থেকে হাসপাতালের ফটকে অবস্থান করছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শরিফুল আলম হাসপাতালে যান। তখন তাঁকে ফুল দেওয়া ও ছবি তোলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়। নেতা চলে যাওয়ার পর দুপুর ১২টার দিকে কয়েকজন ‘হাইব্রিড’ বলে স্লোগান দেন। অন্যদিকে কয়েকজন ‘বলেন তোরা হাইব্রিড। এখানে যাঁরা আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়ে বর্তমানে বিএনপি হয়ে রাজনীতি করতে চান, তাঁদের হাইব্রিড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর দুঃসময়ে যাঁরা বিএনপিতে ছিলেন, তাঁদের এখন রিয়েল বিএনপি হিসেবে ডাকা হয়।
৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি আকবর মিয়ার ছেলে সফিকুল ইসলাম একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন। পক্ষটি মনে করে, একই ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি আক্তার মিয়ার পক্ষ তাদের উদ্দেশে ওই স্লোগান দেয়। এই ধারণা থেকে সফিকুলের পক্ষ ক্ষুব্ধ হয় এবং পরবর্তী সময়ে পক্ষটি লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রতিপক্ষের দোকানপাটে হামলা করে। একপর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। গতকাল উভয় পক্ষের সংঘর্ষে আটজন আহত হন। ওই ঘটনার সূত্র ধরে রাত ১১টার দিকে পক্ষ দুটির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা আসেন। সংঘর্ষ থামাতে মাঠে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শাহিন, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।
আক্তার মিয়া বলেন, ‘সফিকুল আসলেই হাইব্রিড। আর আমরা অরিজিনাল বিএনপি। আওয়ামী লীগ শাসনামলে নেতাদের ছায়াতলে থেকে অনেক অপকর্ম করে আর্থিকভাবে ভালো ছিলেন সফিকুল। আর আমরা মামলার আসামি হয়ে ধানখেত, শর্ষেখেতে রাত কাটিয়েছি। আজ বিনা উসকানিতে সফিকুলের পক্ষ আমাদের ওপর হামলা চালাল। তাদের হামলায় আমাদের ১০জন আহত হয়েছেন।’
তবে সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে হাইব্রিড আর আক্তার মিয়াদের অরিজিনাল বিএনপি বলার সুযোগ নেই। আমি যুবদলের রাজনীতি করেছি। আজ সকালে আক্তার মিয়ার লোকজন প্রথমে আমার অফিস ভাঙচুর করেছেন। প্রতিপক্ষের হামলায় আমাদের পক্ষের তিনজন আহত হয়েছেন।’
ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গিয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করে এসেছি। আগামী মঙ্গলবার সালিস হবে। এর আগে কেউ যদি আবার সংঘর্ষে জড়ায়, তাহলে নেতারা ওই পক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।’
ভৈরব থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, আমাদের পুলিশ সদস্যরা ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে।
Leave a Reply