1. admin@drisshopat-news.com : admin :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
ইউনিসেফের তথ্যে এখনো বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে কুলিয়ারচরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান  বিধবা চাচীর সঙ্গে ভাতিজার বিয়ে নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য, বাড়ি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন” সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিষিদ্ধের দাবিতে ভৈরবে প্রতিবাদ সমাবেশ  ভৈরবে শয়তানের নিঃশ্বাস প্রয়োগ করে স্বর্ণালংকার ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই যুবক গ্রেফতার ভৈরবে ওসিকে ঘুষ দেওয়া নেওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সন্মেলন ভৈরব মুক্ত দিবস উপলক্ষে বৈষ্ণম‍্য বিরোধী  আন্দোলনে আহতদের সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ প্রদান ১৯ ডিসেম্বর আজ ভৈরব মুক্ত দিবস ভৈরবে তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ ভৈরবে কাভার্ড- ভ্যান ও সিএনজির সংঘর্ষে তিন মহিলাসহ ৫ জন নিহত মাদার তেরেসা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম
শিরোনাম
ইউনিসেফের তথ্যে এখনো বন্যায় ঝুঁকিতে ২০ লাখ শিশু সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে কুলিয়ারচরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান  বিধবা চাচীর সঙ্গে ভাতিজার বিয়ে নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য, বাড়ি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন” সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিষিদ্ধের দাবিতে ভৈরবে প্রতিবাদ সমাবেশ  ভৈরবে শয়তানের নিঃশ্বাস প্রয়োগ করে স্বর্ণালংকার ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুই যুবক গ্রেফতার ভৈরবে ওসিকে ঘুষ দেওয়া নেওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সন্মেলন ভৈরব মুক্ত দিবস উপলক্ষে বৈষ্ণম‍্য বিরোধী  আন্দোলনে আহতদের সম্মাননা স্মারক ও নগদ অর্থ প্রদান ১৯ ডিসেম্বর আজ ভৈরব মুক্ত দিবস ভৈরবে তাহেরীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ ভৈরবে কাভার্ড- ভ্যান ও সিএনজির সংঘর্ষে তিন মহিলাসহ ৫ জন নিহত মাদার তেরেসা গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড পেলেন সাংবাদিক মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম

ভৈরবে অবহেলায় পড়ে আছে শহিদ বধ্যভূমির স্মৃতিভাস্কর্য! সারা বছরে বিশেষ দিবসেই বাড়ে কদর

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৯ Time View
“পানাউল্লাহ চরে অবহেলায় পড়ে আছে শহিদ বধ্যভূমির স্মৃতিভাস্কর্য! সারা বছরে বিশেষ দিবসেই বাড়ে কদর”

 

 

নাজির আহমেদ আল-আমিন 
১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল আবার পহেলা বৈশাখ। বাণিজ্য কেন্দ্র ভৈরবে মানুষ সেদিন ব্যবসার হালখাতা, মিলাদ-মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ নিয়ে ছিল ব্যস্ত। হঠাৎ করে ভৈরবের আকাশে দেখা যায় চারটি সাবর জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার এবং স্থল পথে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে রামনগর ব্রীজ সংলগ্ন স্থানে গানশীপ। পাক বাহিনী ওই এলাকা থেকে গানশীপ দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ভৈরবের দিকে অগ্রসর হয়। সামরিক বাহিনীর কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে ভৈরবের মধ্যেরচর এলাকায়, কালিপুর বাদশা বিলের পাড় পানাউল্লারচর ও কালিকাপ্রসাদ এলাকায় ছত্রীসেনা নামানো হয়। তখন পাক সেনার ভয়ে সাধারণ মানুষ পালাতে থাকে। অপরদিকে মুক্তিপাগল মানুষ যার যা কিছু ছিল তা নিয়ে প্রতিরোধে নামে। এক পর্যায়ে উপজেলার মধ্যেরচর এলাকায় জনতার লাঠি, দা,বল্লম নিয়ে ছত্রীসেনাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে এখানে বেশ কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। 
পাকিস্তানি ছত্রীসেনা ভৈরব শহরের প্রবেশ করার সময় পথিমধ্যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগসহ মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলে।
অপরদিকে হেলিকপ্টার থেকে কয়েকটি স্থানে নামার পর ছত্রীসেনা দল কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে শহরে প্রবেশ করার সময় উপজেলার শিবপুর সংলগ্ন পানাউল্লারচর নামক খেয়া ঘাটে অপেক্ষমান নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নিমর্ম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। সেদিন ব্রহ্মপুত্রের পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। ওই স্থানে হত্যা করা হয় সাড়ে ৫ শতাধিক শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাকে। একই দিনে পাক বাহিনী ভৈরবের মধ্যেরচর, গোছামারা, চন্ডিবের, কালিপুর, কমলপুর, ভৈরবপুর ও ভৈরব বাজারে আরো দু’শতাধিক নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে। বিভিন্নভাবে আহত হয় কয়েকশত। সেদিন মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভাসছিল শুধু লাশ আর লাশ। পাক সেনারা ওইদিন উম্মাদের মতো নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল।
পানাউল্লারচর (আলগড়া) সাড়ে ৫ শতাধিক নিহতের মধ্যে পরে কিছু আত্মীয় স্বজনরা তাদের লাশ নিয়ে গেলেও বেশির ভাগ নিহতকে ওই স্থানে গণ কবর দেওয়া হয়।
ভৈরবের সাধারণ মানুষ দিনটিকে গণহত্যা ও কালো দিবস হিসাবে আখ্যায়িত করে। তাই বাংলা নববর্ষের দিন কিছু কিছু ব্যবসায়ী দিনটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পুরাতন খাতাপত্র বদল করা থেকে বিরত থাকেন। পরে যে কোন সুবিধাজনক দিনে নতুন বছরের হালখাতা পরিবর্তন করে তারা।
স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালে বধ্যভূমির স্মৃতিভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার পানাউল্লাহ চরের শহিদ বধ্যভূমি এক ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হয়েছিল ভয়াবহ গণহত্যা। অসংখ্য নিরপরাধ মানুষ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা এখানে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। কিন্তু আজ এই বধ্যভূমি পড়ে আছে অবহেলায়, অযত্নে।
লক্ষ্য করা গেছে, এতদিন শুধু ওই স্থানে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে ফুল দেওয়া আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া বছর আর তেমন কিছুই করা হয়নি। বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের মতো বিশেষ দিনে এটি সামান্য আলোচনায় আসে, কিন্তু বছরের বাকি সময় প্রায় সকলেরই স্মৃতির আড়ালে চলে যায়।
দেখা গেছে, পানাউল্লাহ চরের এই বধ্যভূমির বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। চারপাশে আগাছা আর ময়লায় ঢাকা পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্ন। স্মৃতিফলকগুলোতে দেখা দিয়েছে ফাটল, এবং সেখানে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। নেই পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা কিংবা ন্যূনতম নিরাপত্তা। স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে জায়গাটি দিন দিন জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে।
পানাউল্লাহচরের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, “আমাদের ছেলেবেলা থেকেই জানি, এই জায়গায় এক ভয়াবহ গণহত্যা হয়েছিল। এখানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা আমাদের গর্ব। কিন্তু আজ জায়গাটি দেখে মনে হয়, আমরা তাদের সেই গৌরব ভুলে গেছি।”
স্থানীয় গৃহবধূ রওশন আরা বলেন, “এটি শুধু বধ্যভূমি নয়, এটি আমাদের সন্তানদের শেখানোর জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, ত্যাগ ও চেতনা এখান থেকেই তারা শিখতে পারে। কিন্তু এখন এটি দেখলে দুঃখ লাগে।”
স্থানীয় মনচুরা কফি হাউজের পরিচালক শাহিন বলেন,স্মৃতি সৌধের জায়গার চারপাশে গাছে জঙ্গল হয়ে গেছে। স্মৃতি সৌধের উপরে পাতা পড়ে বিছিয়ে আছে। আর এখানে কোন নিরাপত্তা না থাকায় এর ভিতরে বখাটে ছেলেরা নেশার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন। এছাড়া রাস্তা বেহাল অবস্থা যার কারণে এখানে যখন কোন দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে আসে তখন সবাই হিমসিম খায়।
অধ্যাপক সত্যজিত দাস ধ্রুব বলেন, এই স্থানটি শুধু একটি নির্দিষ্ট এলাকার নয়, বরং পুরো জাতির মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ। অথচ এটি আজ সময়ের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথে। আমরা চাই সরকারসহ সবাই স্মৃতিস্তম্ভের স্মৃতি রক্ষার্থে জাদুঘর স্থাপন করুক।
রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো.শহিদুল্লাহ বলেন, “আমরা চাই এটি শুধু একটি স্মৃতিস্তম্ভ হয়ে না থাকুক। এটি যেন একটি জাদুঘর নির্মিত হয়ে আগামী প্রর্জম্য জানতে পারে সেই পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। আর এর মাধ্যমে যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়াবে, তেমনি এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নও হবে।”
ভৈরবের প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম নিজের হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “এ জায়গায় আমরা সাধারন মানুষসহ সহযোদ্ধাদের রক্ত ঝরতে দেখেছি। আমরা জানতাম, স্বাধীনতার পরে এটি জাতীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু আজ এটি অবহেলায় পড়ে আছে। এর এই অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেও ইতিহাসের প্রতি সুবিচার করতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, “এই জায়গাটি রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হতে হবে। আমাদের সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে।”
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শবনম শারমিন বলেন, “বধ্যভূমিটির গুরুত্ব আমাদের প্রশাসন বুঝতে পারে। আমরা এটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
পানাউল্লাহ চরের শহিদ বধ্যভূমি শুধু একটি স্থান নয়; এটি ভৈরবের মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। এটি সংরক্ষণ করা জাতির নৈতিক দায়িত্ব। এটি হারিয়ে গেলে  হারাবে একটি অমূল্য ঐতিহ্য। প্রশাসন, স্থানীয় জনগণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের একটি প্রতীক নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
সময় এসেছে এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে তার হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার। যদি এখনই উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে ভৈরবের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না, তাদের স্বাধীনতার জন্য কত ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


Development: BTMAXHOST