“গরিবের পাতে শোভা পাচ্ছে না ইলিশ, বিকল্প হিসেবে বাড়ছে পাঙাসের চাহিদা”
নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব
ইলিশ, বাঙালির ঐতিহ্যবাহী ও প্রিয় মাছগুলোর মধ্যে অন্যতম হলেও বর্তমানে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ইলিশের আকাশচুম্বী দামের কারণে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের পাতে এই মাছ আর শোভা পাচ্ছে না। ফলে বাজারে ক্রমশ পাঙাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা তুলনামূলকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ইলিশের দাম বর্তমানে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকার বেশি, যা সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে। স্থানীয় বাজারের ক্রেতারা জানাচ্ছেন, ইলিশের এমন দাম দেখে তাঁরা হতাশ। গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরা ইলিশ কিনতে পারছেন না, তাই তারা পাঙাস মাছের মতো কম দামি মাছের দিকে ঝুঁকছেন।
স্থানীয় রিকশাচালক নিজাম মিয়া বলেন, “ইলিশ মাছতো ভাই আমাদের জন্য ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। আগে মাঝে মধ্যে এক পিস কিনতাম, এখন সেটাও পারি না। তাই পাঙাস কিনে কোনো রকমে মাছ খাই।”
চায়ের দোকানি জাকির হোসেন বলেন, “ইলিশ খাওয়ার আশা করিও না। দাম তো আকাশ ছোঁয়া। পাঙাস কিনি, তাও কতদিন কিনতে পারব কে জানে!”
ইলিশের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে অনেক নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবার পাঙাস মাছকে বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করছে। পাঙাসের স্বাদ ইলিশের মতো না হলেও এটি পুষ্টিকর এবং তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য। তাই অনেকেই এখন পাঙাস কিনছেন।
এক গৃহিণী রাবেয়া খাতুন বলেন, “ইলিশ মাছের দাম এখন অনেক বেশি। পাঙাসই কিনতে হচ্ছে। স্বাদ তেমন ভালো না, কিন্তু কি আর করা, পুষ্টির জন্য কিছু তো খেতে হবে।” আবার বাচ্চারা ও খেতে পছন্দ করে।
একজন অটোচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “ইলিশ তো খাওয়ার উপায় নেই। সস্তা বলে পাঙাস কিনছি, এটাও তো ভালো। অন্তত মাছ খাওয়ার চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে পারছি।”
এদিকে মাছের আড়ত,ফেরিঘাট মিনা বাজার,গাছতলাঘাট এলাকার বাজার ও ভৈরবপুর রেললাইন এলাকার বাজারের মাছ বিক্রেতারা জানান, ইলিশের চাহিদা এখনো আছে, কিন্তু দাম বেশি হওয়ার কারণে মানুষ পাঙাসের দিকে ঝুঁকছেন। পাঙাস মাছের চাহিদা ও বিক্রি এখন অনেক বেড়েছে।
ভৈরবপুর রেললাইন বাজার এলাকার পাঙাস মাছ বিক্রেতা কুদ্দুস মিয়া বলেন, “ইলিশের দাম এমন হয়েছে যে অনেকেই কিনতে পারছে না। তাই পাঙাস কিনছে। আমার কাছে প্রতিদিনই মানুষ পাঙাস নিতে আসছে, কারণ দাম কম।”
আরেক বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, “ইলিশের দাম শুনে অনেকেই মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। তখন পাঙাস নিতে আসে। বিক্রি বেশ ভালোই হচ্ছে এখন পাঙাসের।”
মাছের আড়তের আম্মাজান এন্টারপ্রাইজের মাছ ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন,আগে মেঘনা নদী থেকে ইলিশ মাছ ধরা পড়তো। এখন আর আগের মত ধরা পরে না। এছাড়া পদ্মার ইলিশেরও আমদানি কম থাকায় আমাদের ভৈরবে ইলিশের দাম বেশী।
ভৈরব উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “ইলিশের উৎপাদন ও সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ার ফলে দাম বেড়েছে। তবে সরকার চেষ্টা করছে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে। এছাড়া, পাঙাস মাছের উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষ সহজে মাছের পুষ্টি পেতে পারে।”
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রেদুয়ান আহমেদ রাফি বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজার মনিটর করছি এবং মাছের দাম নিয়ে আলোচনা করছি। ক্রেতারা যাতে ন্যায্য দামে মাছ কিনতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি।”
ইলিশ মাছের আকাশছোঁয়া দামের কারণে পাঙাস এখন সাধারণ মানুষের জন্য একটি জনপ্রিয় ও সহজলভ্য বিকল্প হয়ে উঠেছে। যদিও ইলিশের চাহিদা কখনোই কমেনি, তবে পাঙাসই এখন গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের খাবারের তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। ইলিশের দাম যদি এভাবেই বাড়তে থাকে, তাহলে হয়তো ইলিশ শুধু ধনীদের খাবার হিসেবেই থেকে যাবে, আর পাঙাস হবে গরিবের প্রধান মাছ।
Leave a Reply