মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম
কিশোরগঞ্জের জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক ৯ম ও সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেডের দাবীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেল ৪ টায় কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকবৃন্দের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকগণ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ছামিউল ইসলাম এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি পেশ করেন।
উল্লেখ্য, সারাদেশের ন্যায় কুলিয়ারচর উপজেলার প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকগণ সহকারীদের যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে ১০ম গ্রেড প্রদান ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে উন্নীত করার একদফা দাবী জানান।
এসময় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ ফজলে এলাহী (প্রধান শিক্ষক), সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান (সহকারী শিক্ষক), কলকূপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুব আলম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ কুলিয়ারচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলী এমদাদ হোসেন (সহকারী শিক্ষক), লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালমা খান হাসানী, ছয়সূতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ হাবিবুর রহমান, আমোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, আলী আকবরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাবিবুল হক, বেতিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহফুজুল হক, রামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ এনামুল হক ও মনোহরপু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মোবারক হোসেনসহ উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ।
মানববন্ধনে বক্তব্যে শিক্ষকগণ বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড আর শিক্ষার ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষকরা শিক্ষার সূতিকাগারের কান্ডারী। দেশ উন্নয়নশীল কাতারে, মাথাপিছু আয় ২৭৯৩ মার্কিন ডলার। ভিনদেশী ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে। নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল এখন দৃশ্যমান। তাছাড়া দেশ আর্থিকভাবেও সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা নোবেল বিজয়ী বীরের জাতি, আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক, নোবেল বিজয়ী মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায়। বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সাম্য গড়ার প্রত্যয়ে উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধ এবং সমতার বাংলাদেশ গড়ার যা দেখছেন। বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈষম্যহীন সমতার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন সারথী হিসেবে আমরা প্রাথমিক শিক্ষকরা সমতার স্মার্ট নাগরিক গড়ার প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করতে বদ্ধপরিকর।
তাঁরা বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সমযোগ্যতায় সরকারী চাকুরীজীবিগণ ১০ম গ্রেড পেয়ে আসলেও প্রাথমিকের সহকারীদের নিয়োগ যোগ্যতা এন্ট্রি লেভেল স্নাতক দ্বিতীয় বিভাগসহ চাকুরী লাভের পরে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক খামখেয়ালীপনায় চরমভাবে বঞ্চনাও বৈষম্যের সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতি গড়ার কারিগর সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম বেতন গ্রেড প্রদান করা হয়। বিগত ৪ বছর ধরে দাবী দাওয়া ও আন্দোলনের মুখে ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বঞ্চনার বিষয় আঁচ করতে পেরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে উন্নীত করে ১২তম করার প্রস্তাবনা পেশ করলে সারাদেশের সহকারী শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একযোগে সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং অন্যায্য প্রস্তাবনা তৈরীতে জড়িতদের অপসারণ দাবী করে অনতিবিলম্বে চরম অন্যায্য ও বৈষম্য নিরসন করে ন্যায্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সহকারীদের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা,যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিতকরণে ১০ম গ্রেড প্রদানের জোরালো দাবী জানান।
শিক্ষকগণ তাঁদের বক্তব্য আরো বলেন, স্নাতক সমযোগ্যতায় পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব,মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই(পরিক্ষণ বিদ্যালয়)’র সহকারী শিক্ষক, এইচএসসি পাশসহ কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের কৃষি উপ সহকারী,এসএসসি পাশসহ নার্সি ডিপ্লোমাধারী নার্সগণ,বিভিন্ন দপ্তরের অফিস সহকারি (করণিকগণ) ১০ম গ্রেড পেয়ে আসছেন।
অথচ সমযোগ্যতায় জাতি গড়ার প্রধান কারিগর, শিক্ষার প্রথম সোপান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকগণ ১৩তম গ্রেডে বেতন পান যা জাতি হিসেবে সকলের জন্যই লজ্জাজনক। আর অষ্টম শ্রেণি পাস ড্রাইভারদের বেতন গ্রেড ১২তম। অপরদিকে প্রধান শিক্ষকগণের মর্যাদা বৃদ্ধিতে তৎকালীন সরকার ২০১৪ সালে ১০ম গ্রেড ঘোষনা করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সে সিদ্ধান্ত থমকে যায়। প্রধান শিক্ষকরা সেই প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নের জন্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করলে তাঁদেরকে দ্রুততার সঙ্গে ১০ম গ্রেড ও গেজেটেড কর্মকর্তা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিলেও কর্তৃপক্ষ পুনরায় রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করেন, আপীলের রায়েও প্রধানের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে দেয়া রায় বহাল রাখলেও সরকার কালক্ষেপণের জন্য রিভিউ দাখিল করে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করছেন। প্রাথমিকের প্রধানগণ ২০১৪’ সালের দাবীকৃত ১০ম’র দাবী থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে ২০২৪’সালে সময়োপযোগী ৯ম গ্রেড প্রদানের একদফা দাবীতে সোচ্চার হন। দেশব্যাপী সহকারী শিক্ষকদের ১০ম ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডসহ উভয় পদ থেকে শতভাগ পদোন্নতি দানের জন্য একদফা দাবীতে অটল রয়েছেন দেশের ৫ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক। ইতিমধ্যে সারাদেশের সবকটি উপজেলায় মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করাসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে তাঁদের ৯ম/১০ম’র একদফা দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরে জানিয়ে আবেদন জানিয়েছেন। সে আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখে মাসিক সমন্বয় সভায় সহকারীদের ১০ম ও প্রধান শিক্ষক ৯ম গ্রেডের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে প্রাথমিকের জন্য উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কনসাল্টেশান কমিটিতে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।
Leave a Reply